bijoyministries

শিশু পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

শিশু পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব: ঈশ্বরের রাজ্যে শিশুদের ভূমিকা

বাইবেল অনুযায়ী, যীশু তাঁর শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে শিশুদের প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন এবং তাঁদের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। আজকের আলোচনায় আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করবো।

১. ঈশ্বরের রাজ্যে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

মথি ১৯:১৩-১৫, মার্ক ১০:১৩-১৬-এ আমরা দেখতে পাই, শিশুরা ঈশ্বরের রাজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যীশু তাঁর শিষ্যদের শেখান, শিশুরা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাঁদের বিশ্বাস ও নম্রতা আমাদের জন্য আদর্শ। যীশু অনেকটা বিরক্ত হয়েই শিষ্যদেরকে আদেশ করেছিলেন, “শিশুদেরকে আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিও না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই।”

এতে স্পষ্ট যে, শিশুরা শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে আসার জন্য অনুমোদিত তা-ই নয় বরং তাঁদের আস্থা, বিশ্বাস ও নম্রতা আমাদের জীবনের জন্য আদর্শ। তাঁদের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা এবং পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।

২. শিশুদের পরিচর্যা সুরক্ষা

ঈশ্বর শিশুদের প্রতি দয়া ও সুরক্ষার কথা বলেছেন। গীত ৬৮:৫-এ বলা হয়েছে, “ঈশ্বর দূর্বলদের পক্ষ নেন।” শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যখন শিশুরা অবহেলিত বা নির্যাতিত হয়, তখন ঈশ্বর দুঃখিত হন এবং তিনি আমাদের তাদের জন্য কথা বলতে ও তাদের রক্ষা করতে নির্দেশ দেন (মথি ১৮:৫-৬)।

আজকের সমাজেও, অনেক শিশু শারীরিক, মানসিক বা সামাজিকভাবে নির্যাতিত হয়। আমাদের ঈশ্বরের আদর্শ অনুসরণ করে তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। শুধুমাত্র আমার সন্তান নয়, বরং মণ্ডলী ও আমাদের সমাজের প্রতিটি শিশুই এক একটি মূল্যবান উপহার, তাদেরকে সঠিক শিক্ষা ও সহানুভূতির সাথে যত্ম করা এবং পূর্ণাঙ্গ ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা উচিত।

৩. শিশুদের শিক্ষা মিশন

ঈশ্বর শিশুদেরকে শুধুমাত্র অনুসরণকারী হিসেবে নয়, বরং নেতা হবার জন্যও বেছে নেন। শিশুরা শুধুমাত্র ছোট নয়, বরং তারা ঈশ্বরের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বাইবেলে যেমন ইসাহাক, মোশী, শমূয়েল, দাউদ, এবং অন্য অনেক শিশুদের জীবনকে সামনে এনে দেখানো হয়েছে, আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে তাদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ওপর। তারাও ঈশ্বরের মিশনের অংশ।

মথি ১৮:৪-এ যীশু বলেছেন, “যে কেউ এই শিশুর মতো নিজেকে নম্র করে, সে স্বর্গরাজ্যে শ্রেষ্ঠ।” শিশুরা নম্রতা, বিশুদ্ধ বিশ্বাস এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার উদাহরণ, এবং আমাদের তাদের যত্ন নিতে হবে এমনভাবে যাতে তারা তাদের জীবনে ঈশ্বরের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে।

৪. শিশুদের উন্নতি ঈশ্বরের উদ্দেশ্য

হিতোপদেশ ২২:৬ পদে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, “শিশুকে তার গন্তব্য পথ অনুযায়ী শিক্ষা দাও, বৃদ্ধ হলে সে তা থেকে সরে যাবে না।” আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ঈশ্বরের পথ সম্পর্কে শিখছে ও তা বুঝতে এবং অভিজ্ঞতা লাভ করছে করতে করতে বড় হচ্ছে, যাতে তারা তাঁর রাজ্যে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে। যদি আমরা তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তারা ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে না।

 

আমাদের মনে রাখতে হবে যে শয়তান আজ শিশুদের জীবন বিকৃত করার চেষ্টা করছে। বাইবেল যেমন সতর্ক করে, বর্তমান প্রজন্মের সম্ভাবনা ধ্বংস হতে পারে যদি আমরা তাদের ঈশ্বরের পথে লালন-পালন না করি। আমাদের দায়িত্ব হলো শিশুরা ঈশ্বরের প্রেম বুঝতে শিখে বেড়ে ওঠা, যাতে তারা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারে।

উপসংহার:

ঈশ্বর আমাদের শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন। ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং যীশু তাঁর জীবন এবং শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হয়। শিশুরা কেবল একটি উপহার নয়, বরং তারা একটি প্রতীক, একটি উদাহরণ এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের মিশনের একটি অংশ।

আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞান দিয়ে শিশুদের লালন-পালন করতে হবে, তাদের রক্ষা করতে হবে এবং তাদের তাঁর পথ শেখাতে হবে, যাতে তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে এবং ঈশ্বরের রাজ্যে অবদান রাখতে পারে। আসুন আমরা আমাদের উপর অর্পিত শিশুদের যত্ন এবং লালন-পালনের ক্ষেত্রে যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করে চলি। আমরা যেন তাঁর রাজ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকৃতি দিতে পারি এবং তাঁর প্রেম ও অনুগ্রহে তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করতে পারি।

Scroll to Top