Bijoy Ministries

পুনরুত্থানের প্রকৃত উদ্দেশ্য

পুনরুত্থানের প্রকৃত উদ্দেশ্য

মৃত্যু, পাপ এবং মুক্তির প্রশ্ন হলো মানবজাতির সবচেয়ে বড় এবং গভীর চিন্তা। মানুষ জীবনের ছোট-বড় সিদ্ধান্তগুলো প্রতিদিন নেয়, কিন্তু এমন কিছু সিদ্ধান্ত রয়েছে যেগুলো শুধু আমাদের জীবনের বর্তমানকেই নয়, ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করে। যীশু খ্রিষ্টের পুনরুত্থান এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়। এটি শুধু বিশ্বাসের বিষয় নয়, এটি সত্যের ভেতর থেকে আসা একটি নতুন পথের সংকেত।

যীশুর পুনরুত্থান কেবল একটি অলৌকিক ঘটনা বা ঐতিহাসিক বিস্ময় নয়। বাইবেল আমাদের দেখায়, এটি আসলে মৃত্যু, পাপ, বিচার, প্রেম এবং মুক্তি গাঁথা। আজ জানবো, কেন যীশুর পুনরুত্থান কেবল একটি অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে পরিবর্তন করে।

মৃত্যুর উৎস ও তার শক্তি

মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য। এটি মানব জাতির অভিশাপের মতো সবসময় উপস্থিত। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে—মৃত্যু এলো কোথা থেকে? কে এটি তৈরি করেছিল?

বাইবেল বলে, মৃত্যু ঈশ্বরের সৃষ্টিই। প্রথম মানব আদমকে ঈশ্বর বলেছিলেন, “যেদিন তুমি সেই বৃক্ষের ফল খাবে, সেদিনই তুমি মরবে।” এটি একটি সতর্ক সংকেত ছিল, যেখানে মৃত্যু ছিল পাপের ফল। ঈশ্বরের সৃষ্ট মৃত্যু কোনো শয়তানের পরিকল্পনা ছিল না, বরং পাপের মাধ্যমে এটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাপ মৃত্যু আনতে শুরু করে। ১ করিন্থীয় ১৫:৫৬ বলছে, “মৃত্যুর হুল হল পাপ, এবং পাপের শক্তি হল ব্যবস্থা বা শরিয়ত।”

পাপ, বিচার এবং ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা

পাপ হচ্ছে ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করা, যা মানুষের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানকে নষ্ট করে দেয়। ঈশ্বর প্রেমময় হলেও, তিনি ন্যায়পরায়ণ বিচারক। যে কোনও অপরাধের জন্য বিচার প্রয়োজন। ঈশ্বর কোনো অপরাধীকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করতে পারেন না, কারণ তিনি ন্যায়পরায়ণ।

এখন প্রশ্ন উঠে, এই বিচারের ভার কে নেবে? ঈশ্বর কি পাপীদের জন্য কোনো সমাধান দিতে পারেন না? কিন্তু ঈশ্বর সেই সমাধান নিজেই প্রদান করেন। তিনি মানুষ হয়ে আসেন এবং পাপীর জায়গায় দাঁড়িয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইব্রীয় ২:১৪-১৫ বলে, “তিনিও একইভাবে সেই অংশগ্রহণ করলেন, যেন মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি ধ্বংস করেন তাকে যার হাতে মৃত্যু ছিল, অর্থাৎ শয়তানকে।”

যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান: পরিত্রাণের একমাত্র পথ

যীশুর মৃত্যু কেবল একজন শহীদের আত্মত্যাগ নয়, এটি ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পিত আত্মসমর্পণ। যীশু পাপী ছিলেন না, কিন্তু পাপীর জায়গায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে তিনি মৃত্যু ও পাপ, উভয়ের বিচার করেন।

যেহেতু যীশুর মধ্যে কোনো পাপ ছিল না, মৃত্যু তার উপর কোনো অধিকার রাখেনি। মৃত্যু তাকে ছুঁতে পারলেও তাকে আটকে রাখতে পারেনি। এজন্যই, যীশুর পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী ছিল—এটি কেবল একটি অলৌকিক পুনরুজ্জীবন নয়, বরং এটি ছিল পাপ এবং মৃত্যুর উপর চূড়ান্ত বিজয়।

শয়তানের পরিকল্পনা এবং ঈশ্বরের প্রতিউত্তর

শয়তান জানত, মানুষ পাপ করলে মৃত্যু তার ওপর শাসন করবে। তাই সে আদম ও হাওয়াকে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু ঈশ্বর এই চক্রান্ত জানতেন এবং তার বিপরীতে একটি বড় পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি নিজেই মানুষের রূপ ধারণ করেন এবং মৃত্যুর সম্মুখীন হন—কিন্তু পাপহীনভাবে। এই নিঃপাপ আত্মবলিদানের মাধ্যমে শয়তানের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা

একবার আমার বাবা প্রশ্ন করেছিলেন, “ঈশ্বর কেন নিজে দুঃখ ভোগ করলেন? তিনি কি অন্যভাবে আমাদের পাপ মাফ করতে পারতেন না?” আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম, “তুমি যদি একজন বিচারক হও, তবে বিচার ছাড়াই কিভাবে তুমি অপরাধীকে মাফ করে দাও? তাহলে তুমি আর ন্যায়পরায়ণ থাকবেন না।”

তখন তিনি বলেছিলেন, “অতএব, ঈশ্বর নিজেই আমাদের পাপের বিচার নিলেন।” আমি বললাম, “ঠিক তাই।”

উপসংহার

যীশুর পুনরুত্থান শুধুমাত্র একটি অলৌকিক ঘটনা নয়—এটি ঈশ্বরের প্রেম, বিচার এবং পরিত্রাণের একটি পরিকল্পনার পরিপূর্ণ বাস্তবতা। মৃত্যু আর পাপের শক্তি চিরতরে ভেঙে গেছে। যীশুকে বিশ্বাসী কোনো মানুষ আর মৃত্যু বা পাপের কাছে পরাজিত হবে না, বরং তাকে নতুন জীবনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

পুনরুত্থান আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি, জীবনের শক্তি, এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।

লেখকঃ ফ্রান্সিস কিশোর

Scroll to Top