দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা
আদি ২:১৮-২৫, মথি ১৯:৩৬, ইফি ৫:২২-৩৩, কলসিয় ৩:১২-১৪; রোমিয় ১৩:১-২
ভূমিকা:
খ্রীষ্টিয়ান (ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক) হিসাবে বাইবেলীয় বিবাহের সাথে এর সম্পর্ক কি তা দেখতে যাচ্ছি। বিবাহ, ঈশ্বরের দ্বারা পরিকল্পিত, একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান যা মানব ঐতিহ্য বা সাংস্কৃতিক নিয়ম নয়।
অধিকাংশ ব্যক্তি বিয়ের দিনের জন্য পরিকল্পনা বা স্বপ্ন দেখে, বড়জোর হানিমূণ নিয়ে ভাবে কিন্তু প্রকৃত দাম্পত্য শুরু হয় বিয়ের পরের দিন থেকে।
- ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হিসাবে, আমাদের অবশ্যই দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ঈশ্বরের মূল ইচ্ছাগুলি বুঝতে হবে এবং তার সাথে অংশগ্রহন করতে হবে।
- খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে, আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের আইন অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য বলা হয়েছে, যা ঈশ্বরের চরিত্র ও তাঁর উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে।
মানব সমাজ টিকে থাকার জন্য সব রকম ভাবেই দাম্পত্য সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। আর এ জন্যে বিবাহ সর্ম্পকে আজকের দিনে মানুষের নিন্মমানের মনোভাব খুবই বিপদজ্জনক।
- যখন আমাদের সকল ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ এবং ভিত্তিলি বিভি উপায়ে লাঞ্চিত হচ্ছে তখন দাম্পত্য সম্পর্ক আক্রমনের শিকার হবে এতে আর্শ্চয্য হবার কি আছ?
- এতো মানুষ যখন বিবাহ নিয়ে বিভ্রান্ত তখন সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটি কি কাম্য নয়?
- বিবাহ বা দাম্পত্যের উপর প্রতিপক্ষের বিশ্বব্যাপী আক্রমণ আসলে সমাজের উপরই একটি আক্রমণ, এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের উপর একটি আক্রমণ, যিনি সমাজ ও বিবাহের স্রষ্টা এবং নির্মাতা।
- প্রতিপক্ষ জানে যে সে যদি দাম্পত্যকে ধ্বংস করতে পারে তবে সে পরিবারকে ধ্বংস করতে পারবে; পরিবারকে ধ্বংস করতে পারলে সে সমাজকে ধ্বংস করতে পারবে, আর সে সমাজকে ধ্বংস করতে পারলে মানুষকে সে ধ্বংস করতে পারবে।
সুতরাং, আসুন আমরা আজকে ঈশ্বরের বাক্যে ডুবে যাই দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য তাঁর নকশাকে পুনরায় আবিষ্কার করতে এবং রাজ্যের নাগরিক হিসেবে এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানটিকে সংরক্ষণ ও লালনপালনে আমাদের যে ভূমিকা পালন করতে হবে তা বুঝতে চেষ্টা করি।
প্রথমতঃ দাম্পত্য সম্পর্ক এটি মানুষের আইডিয়া না, ঈশ্বরের।
একদম শুরুতেই শুরু করা যাক, আদি ২:১৮-২৫-এ, ঈশ্বর দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেন। আদমকে সৃষ্টি করার পর তিনি ঘোষণা করেন,
“মানুষের একা থাকা ভালো নয়। আমি তার জন্য উপযুক্ত একজন সঙ্গিনী তৈরি করব।”
ঈশ্বর নারী সৃষ্টি করেন, এবং দুজন বিবাহের মাধ্যমে এক দেহে পরিণত হন।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, দাম্পত্য সম্পর্ক ঈশ্বরের ডিজাইন, এবং শুরু থেকেই মানুষের জন্য তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এটা সামাজিক চাপ বা মানুষের উদ্ভাবনের ফল ছিল না—এটি ঈশ্বরের রাজ্য ব্যবস্থার অংশ। ঈশ্বরের চরিত্রে যে একতা, সাহচর্য এবং সম্পর্ক এর গুনাগুন তা প্রতিফলিত করার জন্য বিবাহ বা দাম্পত্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
- ঈশ্বরের রাজ্যে, সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর দাম্পত্য সম্পর্ক হলো পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্কগুলির মধ্যে একটি অন্যতম সম্পর্ক।
দাম্পত্য সম্পর্ক হলো ঈশ্বরের ভালোবাসা, তাঁর একতা ও তাঁর উদ্দেশ্যের একটি জীবন্ত উদাহরণ। পৃথিবীতে তাঁর মহিমা প্রতিফলিত করার জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হলো দাম্পত্য সম্পর্ক, যা বিবাহের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
- দাম্পত্য সম্পর্কের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো পরিবর্তিত এবং পরিমার্জিত হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হিসেবে আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের আইন ও নীতির ওপর অটল থাকতে হবে।
- এর মধ্যে রয়েছে বিবাহের চুক্তিকে সম্মান করা, বিবাহের বিছানার পবিত্রতা বজায় রাখা এবং এমনভাবে জীবনযাপন করা যা বিবাহের জন্য ঈশ্বরের নকঁশাকে সম্মান করে।
- বিবাহ হেরফের করার জন্য একটি মানুষের তৈরি কোন প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সম্মান ও সুরক্ষিত করার জন্য একটি ঐশ্বরিক চুক্তি।
দ্বিতীয়তঃ দাম্পত্য সম্পর্কের অজিরিনাল পরিকল্পনার দু’জন ব্যক্তির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় না ।
উপদেশক ৪:১২ “তিন জন মানুষ একত্র হলে তাদের শক্তি আরো বেশী হবে। তারা হল এক সঙ্গে জড়ানো দড়ির তিনটি অংশের মতো। তাদের শক্তিকে ভাঙ্গা খুবই কঠিন।“
বাইবেলীয় দাম্পত্য সম্পর্ক তিনজন ব্যক্তির সমন্বয় যেখানে তৃতীয় ব্যক্তি অদৃশ্য কিন্তু অকার্যকর নয়।
- আর এই দাম্পত্যের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সেই অদৃশ্য ঈশ্বরকে দৃশ্যমান করা, সিদ্ধান্তে, আচরণে, কাজে, চিন্তায় ইত্যাদি। দাম্পক্য সম্পর্কই হচ্ছে পৃথিবীর সকল সম্পর্কের ভিত্তি।
- আমাদের সম্পর্ক হবে ঈশ্বর কেন্দ্রিক। কারণ প্রচলিত সম্পর্কের যে উদ্দেশ্য তা হচ্ছে পরস্পরকে সন্তুষ্ট করা কিন্তু বাইবেলীয় সম্পর্কের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্পরের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা।
- যে পরিমানে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই ঈশ্বরের দিকে অগ্রসর হবেন, সেই পরিমানে তারা পরস্পরের নিকটবর্তী হয়ে উঠবেন। কারণ এখানে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অভিন্ন।
তৃতীয়তঃ আবেগগত পরিপক্কতাঃ বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি অপরিহার্য।
দাম্পত্য জীবন যাপন করতে সবাই যথেষ্ট পরিপক্ক নয়। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা (দক্ষতা, সক্ষমতা, ফিটনেস) এবং অনুগ্রহ প্রয়োজন। বিয়ে সবার জন্য নয়। কেউ কেউ, জন্ম থেকেই বিয়ে নিয়ে চিন্তা করেনি বলে মনে হয়। আবার কাউকে কাউকে লোকেরাই বাদ দিয়ে দিয়েছে, (সেটাই তারা মেনে নিয়েছে) সে জন্য তারা বিয়ে করে না, এবং কেউ কেউ ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তুমি যদি দাম্পত্যের বিশালতায় (বৈচিত্রে/ভিন্নতায়) বৃদ্ধি পেতে সক্ষম হও তবে বিয়ে করো।” মথি ১৯:১১-১২ (ম্যাসেজ অনুবাদ)
বিশালতায় বৃদ্ধি পাবার অর্থ হচ্ছে প্রসারিত হওয়া, প্রশস্ত হওয়া বা বর্ধিত হওয়া। ঈশ্বর আপনাকে একটি ভিন্ন অবস্থায় নিয়ে যেতে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কে একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করতে চান। দাম্পত্য সম্পর্ক আপনাকে খুশি বা সুখ দেবার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি। এটি তৈরি হয়েছে আপনাকে আরও উত্তম (বেটার/ইমপ্রুভ) বানাবার জন্য। আপনি যদি খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের অধীনে জীবন-যাপন করেন, তবে তিনি আপনাকে আরও বেশি যীশুর মত করে গড়ে তুলতে এবং আপনার কাজে সম্বৃদ্ধি নিয়ে আসতে আপনার জীবন সঙ্গীকে ব্যবহার করেন।
বাইবেল বলছে, ‘লোহা যেমন লোহাকে ধারালো করে, তেমনি একজন আর একজনের জীবনকে কাজের উপযুক্ত করে তোলে।’ হিতো ২৭:১৭ দাম্পত্যে দুজন ভিন্ন মানুষের এক হওয়া। দু’জনা এই ভিন্নতাই পরস্পরের শক্তির কারন, কিন্তু কখনো কখনো দু’জনা স্বেচ্ছায় নিজেকে প্রসারিত বা বর্ধিত করতে না চাওয়ার কারনে এই ভিন্নতা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মানসিক প্রস্তুতি বা পরিপক্কতার বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় – কিশোর বয়সেও মানুষ পরিপক্ক হতে পারে, আবার প্রাপ্তবয়স্ক বয়সেও মানুষ মানসিকভাবে অপরিণত থাকতে পারে।
- সঙ্গীর সাথে একটি নতুন জীবন গড়তে অবশ্যই আমাদের বাবা-মায়ের পরিবারের মানসিক নির্ভরতা ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- বাবা-মায়েরও তাদের সন্তানের বৈবাহিক বন্ধনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুমতি দিয়ে নিজেদের মত থেকে তাদেরকে “ছেড়ে দিতে” শিখতে হবে।
- এই মানসিক স্বাধীনতা সম্পর্ককে শক্তিশালী করে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে পিতামাতার সাথে সন্তানের আরো গভীর বন্ধন গড়ে তোলে।
- সন্তান অবশ্যই আপনার বাবা-মাকে শ্রদ্ধা-সম্মান করবেন, কিন্তু জীবন সঙ্গী আপনার প্রাধান্য। বিয়ের সব অন্য সব সম্পর্কই থাকবে কিন্তু প্রাধান্য পরিবর্তীত হবে।
- সব সময় মানসিক অবস্থা এক যাবে না, কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে একে অপরকে প্রাধান্য দেবার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। মুড সুইং হতে পারে, কিন্তু মন সুইং হবে না।
- একমাত্র মৃত্যুই আমাদের দুজনকে আলাদা করবে, আর কোন কিছু না। এটি একটি স্থায়ী চুক্তি – যা ভঙ্গ করার কোন সুযোগ নেই।
- ভালো লাগছে তাই সম্পর্কে জড়ালাম আর মন চাচ্ছে না তাই বাদ দিলাম এটি এতটা সহজ সম্পর্ক নয়।
- যদিও মতবিরোধ এবং চ্যালেঞ্জ আসবে, তারপরও অবশ্যই একসাথে বেড়ে উঠতে, একে অপরের সাথে মানিয়ে নিতে এবং ধৈর্য ও বিশ্বাসের সাথে সমস্যাগুলি সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।
- দাম্পত্য সম্পর্ক হলো আজীবন শেখার এবং পারস্পরের সাথে এডজাষ্ট করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে উভয় সঙ্গীই একে অপরের অপূর্ণতাকে সহজে মেনে নেয়।
- যীশু প্রেরিতদের ‘দাম্পত্য সর্ম্পর্কের স্থায়ীত্ব, বোঝাতে বলেছিলেন যে দাম্পত্যের চুক্তি একটি স্থায়ী চুক্তি।
- কোন একজন শিষ্য মথি ১৯:১০ পদে বলেছেন, “স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যদি এই রকমেরই হয় তাহলে তো বিয়ে না করাই ভাল।”
- কোন কোন ব্যক্তি তাদের বিবাহ যে একটি চুক্তি তা বুঝতে পারেন না। তারা বোঝেন না যে এটি কোন কি আইনি চুক্তি নাকি সামাজিক চুক্তি, নাকি সমঝোতামুলক চুক্তি – তারা সহজেই বিভ্রান্ত ফলে তারা মনে করেন যে সমাজে অন্য লোকদের মতো, যদি স্বামী-স্ত্রী কেউ অপারগ হয় তবে সেই চুক্তি ভাঙ্গা যাব।
- এই চুক্তি কোন ভঙ্গ করার কোন সুযোগ নেই, কারন হচ্ছে এই চুক্তি একটি আত্মিক প্রতিজ্ঞার চুক্তি যা ঈশ্বর, আমার ও তোমার মধ্যে হয়ছে। “ঈশ্বররে প্রতজ্ঞিানুসারে আমরা একসাথে থাকবো”
- একজন পুরুষরে সারা জীবনরে জন্য একজন নারী, এই ভাবনা ঐ শিষ্যের জন্য কঠিন ছিল!
- দাম্পত্য যদি মানুষের তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এটি ইচ্ছা খুশি মত বেছে নেওয়া ও বাদ দেবার মানুষের এখতিয়ারের মধ্যে থাকতো।
- যেহেতু ঈশ্বরই দাম্পত্য সম্পর্ককে তৈরি করেছেন, তাই এর মান নির্ধারণ এবং এর নিয়ম নির্ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। এটা দূর করার ক্ষমতা একমাত্র তারই আছ। কিন্তু তিনি এটি করবেন না…
- কারণ বাইবেল এ বিষয়ে স্পষ্টঃ দাম্পত্য হল একটি ঈশ্বর-নিয়ন্ত্রিত প্রতিস্ঠান যা একটি আজীবন সর্ম্পকের মধ্যে একজন পুরুষ এবং একজন নারীকে “এক দেহ” হিসাবে যুক্ত করে।
- পৃথিবীতে যতদনি মানুষের জীবন থাকবে ততদনি এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে। শুধুমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমইে দু’জন বিছিন্ন হতে পারে।
- কোন একজন শিষ্য মথি ১৯:১০ পদে বলেছেন, “স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যদি এই রকমেরই হয় তাহলে তো বিয়ে না করাই ভাল।”
চতুর্থত- দাম্পত্য সম্পর্কঃ যীশু ও মণ্ডলীর মধ্যেকার সম্পর্কের একটি চিত্র।
ইফি ৫:২২-২৩
ঈশ্বরের রাজ্যে বিবাহ সম্পর্কে সবচেয়ে শক্তিশালী সত্যগুলির মধ্যে একটি প্রকাশ করে: এটি চার্চের সাথে খ্রীষ্টের সম্পর্কের একটি চিত্র। পৌল বলেছেন যে, স্ত্রীদের তাদের স্বামীর নেতৃত্ব মানতে হবে যেমন মণ্ডলী যীশুর নেতৃত্ব মানে, এবং স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসবে যেভাবে যীশু মণ্ডলীকে ভালোবেসেছেন।
- এটি ঈশ্বরের রাজ্যের সম্পর্ক, যেখানে আত্মত্যাগ, ভালোবাসা এবং ঐক্য-ই হচ্ছে ভিত্তি।
- খ্রীষ্টিয়ান দাম্পত্যে, ঈশ্বরের রাজ্যের আইন অনুসারে স্বেচ্ছাচার, অন্যায় ভাবে সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ বা স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষার কোন সুযোগ নেই; বরং এটি পারস্পরিক আত্মসমর্পণ, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক।
- স্বামী তার স্ত্রীকে সর্বোচ্চ আত্ম-ত্যাগের সাথে ভালোবাসবে, সঙ্গীর জন্য তার জীবন বিলিয়ে দেবে, ঠিক যেমন যীশু মণ্ডলীর জন্য তার জীবন দিয়েছেন।
- স্ত্রীর তাদের স্বামীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে, যেভাবে মণ্ডলী যীশুকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে।
- এই পারস্পরিক ভালোবাসা ও বশ্যতাই দাম্পত্যকে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রতিফলিত করে।
- ঈশ্বরের রাজ্যে, নেতৃত্ব হল অন্যদের উপর শাসন করা নয় বরং তাদের সেবা করা।
- দাম্পত্যে একজন স্বামীর ভূমিকা হল খ্রীষ্টের মতো ভালোবাসার সাথে তার স্ত্রীর সেবা করা, এবং একজন স্ত্রীর ভূমিকা হল তার স্বামীকে সম্মান করা, তার নেতৃত্বের বশ্যতা স্বীকার করা যেমন তিনি যীশুর কাছে বশ্যতা স্বীকার করেন।
- এই পারস্পরিক বশ্যতা এবং ভালোবাসা একটি শক্তিশালী, একতার সম্পর্ক তৈরি করে, যা যীশু এবং তাঁর মণ্ডলীর মধ্যে সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে।
- খ্রীষ্টিয়ান ম্যারেজ হচ্ছে যীশুর মত একে অপরের জন্য ক্রুশারোপীত হওয়া।
পঞ্চমত – দাম্পত্য সম্পর্ক একটি মূল্যবান রত্মের মত।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। দার্ম্পত্যের প্রাথমিক উদ্দেশ্য যৌনতা বা বংশবৃদ্ধি না এটি একটি রত্ন।
- “বিবাহ” বা “দাম্পত্য” এর জন্য মূল গ্রীক শব্দ হল Γάμος Gámos’ গ্যামোস, যা ইংরেজি ‘Gem’ জেম বা “রত্ন” একই মূল থেকে এসেছে। সেই মূল শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “একত্রে মিশে যাওয়া” (join or blend to form a single entity)। একত্রে/গলিয়ে বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করে যার মাধ্যমে মূল্যবান রত্ন/হীরা মাটির গভীরে গঠিত হয়।
- আর এই প্রক্রিয়াটি দাম্পত্যের একেবারেই উপযুক্ত বর্ণনা। এই পদ্ধতিটি দাম্পত্যের বর্ণনা দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মূল্যবান রত্ন (যেমন হীরা, রুবি, পান্না এবং নীলকান্তমণিগুলি) তৈরি হয় সাধারণ সব উপাদান থেকে, এগুলি মাটির অনেক গভীরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রচুর তাপ এবং মারাত্মক রকমের চাপের ফলে রত্মে পরিণত হয়।
- তাপ, চাপ এবং সময় একসাথে কাজ করে সবচেয়ে সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ কিছুতে রূপান্তরিত করতে পারে। জীবনের কিছু শিক্ষা আমরা জ্বলন্ত চুলায় শিখি!
যেমন, কয়লাঃ কয়লা তৈরি হয় যখন আংশিকভাবে পচনশীল কাঠ বা অন্যান্য উদ্ভিদের বস্তু আর্দ্রতার সাথে মিলিত হয়ে বাতাসহীণ পরিবেশে প্রচন্ড তাপ ও চাপের ফলে কয়লা তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া রাতারাতি ঘটে না, শত শত বছর লাগে। যদিও কয়লা মূলত কার্বনের একটি রূপ, তবুও রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর ভিন্ন ভিন্ন উপাদানগুলিকে আলাদা করা সম্ভব।
- কয়লা যা পৃথিবীতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে – হাজার হাজার বছর – ক্রমাগত তাপ এবং চাপে অবশেষে হীরাতে পরিণত হয়।
- রাসায়নিকভাবে, হীরা খাঁটি কার্বন। মজার বিষয় হচ্ছে, এর সৃষ্টিতে ব্যবহৃত স্বতন্ত্র উপাদানগুলি আর সনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
- চাপের ফলে তারা একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদানে (সত্তায়) পরিণত হয়েছে। তারা একে অপরের সাথে মিশে গেছে। তাপ কার্বনকে/হীরাকে তার দীপ্তি/উজ্জলতা এনে দেয়।
- বিয়ে করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে, কিন্তু দাম্পত্য গড়ে তুলতে সারাজীবনের প্রয়োজন।
- এটা একটা কারণ যে ঈশ্বর বিবাহকে একটি স্থায়ী, আজীবনের সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
- আলাদা বৈশিষ্টের, চরিত্রের, পছন্দের, ব্যাকগ্রাউন্ডের ও ব্যক্তিত্বের দুজন ব্যক্তিকে এক দেহে মিশে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার।
- খ্রীষ্টিয়ান দাম্পত্য এবং জগতের দাম্পত্য চাপের সময় ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। (কোন খ্রীষ্টিয় দাম্পত্যে এবং অখ্রীষ্টিয় দাম্পত্যে চাপ আলাদা ভাবে প্রভাবিত করে)
- অখ্রীষ্টিয় দাম্পত্যে, যখন চলা কঠিন হয়ে যায়, তারা একে অপররের কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়।
- খ্রীষ্টিয় দাম্পত্যে, সেই একই তাপ এবং চাপ, দম্পতিকে একত্রিত করে, যাতে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়, তারা অবিচ্ছেদ্য এবং অটুট inseparable and unbreakable হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
দাম্পত্য সম্পর্কের মূল উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের মহিমা প্রতিফলিত করা এবং তাঁর পরিকল্পনা পূরণ করা। এটা মানুষের উদ্ভাবন নয়, বরং একটি ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠান, যা আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
খ্রীষ্টিয় দাম্পত্য সম্পর্ক হলো পরস্পরের জন্য আত্মত্যাগ এবং একসাথে বেড়ে ওঠার একটি যাত্রা। এটি কেবল আবেগ বা সামাজিক চুক্তি নয়, বরং এটি একটি পবিত্র চুক্তি যা ঈশ্বর, স্বামী এবং স্ত্রী’র মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক ভালোবাসা, সমঝোতা, এবং একসঙ্গে ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে, দম্পতিরা তাদের সম্পর্কের মাধ্যমে ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করতে পারেন।
যখন আমরা বুঝতে পারি যে দাম্পত্য সম্পর্ক খ্রীষ্ট ও মণ্ডলীর সম্পর্কের প্রতিফলন, তখন আমরা এর গভীরতর অর্থ এবং উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারি। এটি কেবল একটি পার্থিব সম্পর্ক নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক সম্পর্ক যা ঈশ্বরের রাজ্যের বাস্তবতা প্রকাশ করে।
তাই, আমাদের উচিত দাম্পত্য সম্পর্ককে লালনপালন করা, এটিকে সমৃদ্ধ করা এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা। ঈশ্বরের নকশা এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করলে দাম্পত্য সম্পর্ক কেবল একটি ব্যক্তিগত আশীর্বাদ নয়, বরং একটি শক্তিশালী সাক্ষ্য হয়ে ওঠে যা পৃথিবীতে ঈশ্বরের মহিমা প্রতিফলিত করে।
আসুন, আমরা সবাই দাম্পত্য জীবনের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে শ্রদ্ধা করি, তাঁর নির্দেশিকা মেনে চলি এবং এই পবিত্র সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করি।
লেখকঃ ফ্রান্সিস কিশোর
ফ্রান্সিস ও নয়োমী ২৩ বছর বিবাহিত জীবন যাপন করছেন, ঈশ্বর তাদেরকে দুটি ছেলে দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। তারা উভয়েই বিগত ১৫ বছর যাবৎ দাম্পত্য সম্পর্ক ও প্যারেন্টিং সম্পর্কে সেমিনার, প্রশিক্ষন ও কনফারেন্সে ফ্যাসিলিটেশন করে আসছেন। তারা যৌথ ভাবে রূপান্তরিত পিতৃ-মাতৃত্ব ও উদ্দেশ্য-প্রণোদীত দাম্পত্য সম্পর্ক বিষয়ে দুটি বই লিখেছেন।